রক্ত পরীক্ষা করে যক্ষ্মা নির্ণয়ের প্রণালি উদ্ভাবন

July 31, 2010
থুতু পরীক্ষা বা এক্স-রে করার পরিবর্তে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ে নতুন প্রণালি (ডায়াগনস্টিক মেথড) উদ্ভাবন করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এই প্রণালিতে রক্ত পরীক্ষা করে যক্ষ্মা নির্ণয় করা হয়। আইসিডিডিআরবি ইতিমধ্যে এই প্রণালিতে যক্ষ্মা নির্ণয়ের কাজ শুরু করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অ্যান্ড ট্রেড অফিসে এই উদ্ভাবনের স্বত্ব নিবন্ধনও করেছে। উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফুসফুসবহির্ভূত ও শিশুদের যক্ষ্মা নির্ণয়ে এই নতুন প্রণালি কার্যকর। এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যক্ষ্মা নির্ণয় করতে এই প্রণালি অধিকতর সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে। আইসিডিডিআরবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইথিওপিয়া ও রুয়ান্ডার স্বাস্থ্যকর্মীরা এই প্রণালির ব্যবহার শুরু করেছেন। জাপান ও মঙ্গোলিয়ায় এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। নতুন এই প্রণালির নাম ‘এন্টিবডিজ প্রডিউজড বাই পেরিফেরাল ব্লাড লিম্ফোসাইট ইন কালচার সুপারন্যাট্যান্ট’ (এএলএস)। উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও আইসিডিডিআরবির পুষ্টি প্রাণরসায়ন পরীক্ষাগারের প্রধান রুবহানা রকিব প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এই উদ্ভাবন যক্ষ্মা প্রতিরোধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এই প্রণালিতে রোগনির্ণয়ের সময় অন্য প্রণালির চেয়ে কম লাগবে। এতে রোগনির্ণয়ে যথার্থতার হারও বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশের মতো যক্ষ্মাপ্রবণ দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে এই উদ্ভাবন কার্যকরভাবে ব্যবহূত হবে।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে নতুন এই প্রণালি ব্যবহার শুরু করেছে আইসিডিডিআরবি। নতুন এই প্রণালি ব্যাখ্যা করার সময় রুবহানা রকিব বলেন, ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত নিয়ে রক্তরস (সিরাম) ও রক্তকোষ (সেল) আলাদা করা হয়। এরপর রক্তকোষ কালচার (বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন) করা হয়। যক্ষ্মার জীবাণু থাকলে রক্তকোষে এন্টিবডি (রক্তে উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর জীবাণু প্রতিরোধক) তৈরি হয়। কালচার করার পর এলাইজার (রং নির্ণয় পরীক্ষার মাধ্যম) মাধ্যমে রক্তকোষের এন্টিবডি মাপা হয়। এন্টিবডি পাওয়ার অর্থ হলো, শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু আছে। রুবহানা রকিব বলেন, নতুন পদ্ধতিতে শিশুদের ও ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা নির্ণয় করা সম্ভব। এতে ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু আছে কি না, তা ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়। বর্তমানে প্রচলিত দুটি প্রণালিতে (থুতু ও এক্স-রে) রোগ নির্ণয়ে যথার্থতার হার ৫০ শতাংশ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। রুবহানা রকিব জানান, রক্ত পরীক্ষার প্রণালিতে উচ্চমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রণালির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন অবকাঠামো ছাড়া এই প্রণালি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। যক্ষ্মারোগ বিশেষজ্ঞ আসিফ মুজতবা বলেন, নতুন এই প্রণালিতে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রায় নির্ভুল ফল পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, সেসব দেশে থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের সনাতন পদ্ধতিকে স্বর্ণমান (গোল্ড মডেল) বিবেচনা করতে হবে। কারণ তাতে খরচ কম এবং সব জায়গায় পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। তিনি বলেন, থুতু পরীক্ষা করে সহজে ফুসফুসের যক্ষ্মা নির্ণয় করা সম্ভব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হলে এক্স-রে করে যক্ষ্মা নির্ণয় করা হয়। তবে আসিফ মুজতবাসহ অনেকেই স্বীকার করেন, সনাতন দুই প্রণালির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন শিশুরা গলার ভিতর থেকে থুথু বের করতে পারে না। আবার শিশুদের এক্স-রেতেও রোগের লক্ষণ স্পষ্ট ধরা পড়ে না। এ ছাড়া ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মাও থুথু পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে না। তৃতীয়ত, কোনো ব্যক্তি হয়তো যক্ষ্মার জীবাণু বহন করছে। কিন্তু থুথু পরীক্ষা করলে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফলাফল ঋণাত্মক আসে। অবশ্য বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের জন্য থুথু পরীক্ষা করা হয়। আইসিডিডিআরবি এই প্রণালি যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অ্যান্ড ট্রেড অফিসে স্বত্ব নিবন্ধন করেছে (ইউনাইটেড স্টেইটস পেটেন্ট ইউএস৭৬৩৮২৭১)। আইসিডিডিআরবি এই প্রথম কোনো উদ্ভাবন পেটেন্ট করল। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই কৃতিত্বের অধিকারী আইসিডিডিআরবি এবং উদ্ভাবক রুবহানা রকিব ও ডেভিড এ স্যাক। যুক্তরাষ্ট্রে কেন স্বত্ব নিবন্ধন করলেন—জানতে চাইলে রুবহানা রকিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বড়। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির পক্ষে এই প্রযুক্তি আফ্রিকা বা পৃথিবীর অন্য এলাকায় বাজারজাত করা সহজ হবে।’ গবেষকেরা ২০০২ সালে এই উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁরা শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিশুদের যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাতে বিশেষ সহায়তা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসফুসের রোগ বিষয়ের শিক্ষক আনোয়ারুল করিম। অন্যদিকে বড়দের যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের রেফারেন্স ল্যাবরেটরির প্রধান মোস্তফা কামাল। নতুন প্রণালিতে রোগ পরীক্ষা শুরু করেছে আইসিডিডিআরবি। পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মহাখালী পরীক্ষাগারে রক্ত দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যায়। রুবহানা রকিব বলেন, এই প্রণালিটি আরও সহজ করার জন্য তাঁরা গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁরা একটি রাসায়নিক পাত (স্ট্রিপ) উদ্ভাবনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। স্ট্রিপ উদ্ভাবন করা গেলে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে না। দুই দিনের কম সময়ে ফলাফল জানা যাবে। রোগ পরীক্ষার খরচও অনেক কমে আসবে
 

ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যার

July 31, 2010
ওয়েবসাইট তৈরী করার একটি সফটওয়্যার হচ্ছে ওয়েব পেইজ মেকার। সফটওয়্যারটি http://softandebook.blogspot.com/2010/07/soft-web-page-maker.html ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকে নামানো যাবে।
Continue reading...
 

 ‘ডিজিটালের কথা বলে আওয়ামী লীগ মধ্যযুগে ফিরে গেছে’

July 29, 2010
জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে ফরিদপুরে মিছিল, গুলিবর্ষণ, ঢাল-সড়কি নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়ার ঘটনায় জেলার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্র...
Continue reading...
 

Blog Archive



 
Make a Free Website with Yola.